হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ:

সেন্টমার্টিনদ্বীপে সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। দ্বীপের বাসিন্দাগণ বসতবাড়ীর সামান্য মেরামত কাজেও বাধার সম্মুখীন হলেও এধরণের বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ অবাধেই অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিন সেন্টমার্টিনদ্বীপ পরিদর্শনে গিয়ে জানা গেছে এতথ্য। তবে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক এ প্রসঙ্গে বলেন ‘সেন্টমার্টিনদ্বীপে নতুন কোন ভবন নির্মাণ করার ছাড়পত্র নেই। সেন্টমার্টিনে কোনাপাড়ায় লাবিবা বিলাস নামে একটি হোটেলের ৩য় তলার ছাদের কাজ নতুন করে চলছে বলে শুনেছি। সরেজমিন পরিদর্শনে যাব। নির্মাণ কাজের সত্যতা পাওয়া গেলে হোটেল কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

জানা যায়, জীববৈচিত্র রক্ষা করার জন্য সেন্টমার্টিনদ্বীপে পাকা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং দ্বীপে নির্মিত অবৈধভাবে গড়ে উঠা ১০৪টি আবাসিক হোটেল ও এক তলা থেকে তিন তলার ৩৮টি আবাসিক হোটল ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দেশনা মতে সেন্টমার্টিনে ছোট কিংবা বড় কোনো স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। তারপরও সরকারের নির্দেশ অমান্য করে চলছে সেন্টমার্টিনে হোটেল লাবিবা বিলাসের ৩য় তলার ছাদের কাজ। এছাড়াও গড়ে উঠছে একের পর এক আরও অনেক স্থাপনা।

৩ জানুয়ারী সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সেন্টমার্টিনদ্বীপের পশ্চিমপাড়া সী-বীচে কোনা পাড়া এলাকায় অবস্থিত দোতলা বিলাসবহুল হোটেল লাবিবা বিলাস। হোটেলটির এক তলা প্রায় অংশ কাঠের তৈরি। তার উপর ২য় তলা তৈরি করা হয়। কাঠ যাতে দেখা না যায় সে জন্য ভালো ভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে। উপরে উঠে দেখা যায় হোটেলের ৩য় তলার ছাদের কাজ চলছে। রিসেপশনে পদস্থ ব্যক্তিদের সাথে মালিক পক্ষের কিছু ছবি টাঙ্গানো রয়েছে। এক তলার ছাদ প্রায় অংশ কাঠের, তার উপর ৩য় তলার ছাদের কাজ কিভাবে হচ্ছে তা জানতে চাইলে কাজে নিয়োজিত রাজমিস্ত্রী মোহাম্মদ আজিজ বলেন ‘আমরা প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক ভবন নির্মাণ কাজ করছি। নির্মাণ সামগ্রীর যাবতীয় মালামাল মালিক পক্ষ এনে দিচ্ছেন। কোথায় থেকে কিভাবে আনছেন তা আমরা কিছুই জানিনা। আমরা টাকা পাচ্ছি আর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি’।

হোটেলে সামনে দেখা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আলী মজুমদার। তিনি বলেন ‘আমি হোটেলের অবস্থা দেখে খুব চিন্তিত। একতলা ছাদে প্রায় অংশ কাঠ হলেও তার উপর কিভাবে তিনতলার পাকা ছাদের কাজ চলছে। এটিও রানা প্লাজার মত কোন একদিন ভেঙ্গে পড়ে আল্লাহ জানে। টাকাতো আর কম নেয়না, এক রাত চার হাজার টাকা নিল। রাতে দেখি উপর থেকে পানি পড়ছে কক্ষের ভিতর, ঘুমোতেও পারিনি ভালোভাবে। হোটেল পরিচালককে অভিযোগ করলে জবাব দেন ৩য় তলা ছাদের কাজ চলছে তাই পানি পড়ছে’।

জানা গেছে, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা সেন্টমার্টিনদ্বীপে স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলেই রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সরকারি কিছু কর্মকর্তার একটি চক্রকে ম্যানেজ করতে হয়। তাদের যোগসাজশে প্রকাশ্যে টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটারের সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইট, লোহা, সিমেন্ট, বালুসহ যাবতীয় নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছে যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ম্যানেজ থাকায় এসব নির্মাণ সামগ্রী নির্বিঘেœ নির্মাণস্থলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর কোনো বাধা ছাড়াই গড়ে উঠছে হোটেল, কটেজ ও রেস্তোরাসহ বহুতল ভবন। তাছাড়া অনেক সময় দ্বীপের তিন দিকে ছড়িয়ে থাকা প্রাকৃতিক পাথর অবকাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাফ বলেন ‘সেন্টমার্টিনদ্বীপের পরিবেশগত কারণে নতুন কোন ভবন তৈরির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। কয়েকটি ভবনের কাজ চলছে বলে শুনেছি। সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদেরকে নোটিশ পাঠানো হবে। সেন্টমার্টিনে ৩৮টি আবাসিক হোটেল ভাঙ্গার নির্দেশনার বিরুদ্ধে আপিল করেছে হোটেল মালিক পক্ষ। আইনী লড়াই করে হোটেল ভাঙ্গার নির্দশনার অপেক্ষায় আছি’।

সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর আহমদ বলেন ‘সেন্টমার্টিনদ্বীপে ইট-সিমেন্ট-রডসহ নির্মাণ সামগ্রী আনতে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগে। এ কারণে স্থানীয় লোকজন ঘর তৈরি করতে পারেননা। এমনকি সামান্য মেরামত কাজ এবং ব্যবহারের জন্য টয়লেট নির্মাণ করতে পারেনা। মাথা গোঁজার ঠাঁই, লেট্রিন, বসবাসের ঘর মেরামত করতে বাধা আসে। আর বহিরাগত ব্যবসায়ীরা বড় বড় হোটেল-মোটেল, কটেজ, বহুতল ভবন করে যাচ্ছে। যত আইন, যত কড়াকড়ি, যত হয়রানী, যত নীতিমাল সবই দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য। অথচ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নানা কৌশলে ইট-সিমেন্ট নিয়ে আসছেন। প্রসাশনকে তারা তোয়াক্কা করেননা’।